বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গত আওয়ামী শাসনে রংপুরের পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, ছোট ভাই আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি প্রধান শিক্ষক, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সহকারী প্রধান শিক্ষক ১ মেয়ে সহকারী শিক্ষক ১ মেয়ে ল্যাব সহকারি, ১ চাচাত বোন সহকারী শিক্ষক এ যেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
কাংখিত যোগ্যতা বিহীন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, অনিয়ম, দূর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য বন্ধের দাবীতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগের হিরিক পরেছে। এহেন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসসহ আশেপাশে মিছিল, মিটিং, মানব বন্ধন, স্মারকলিপি পেশ করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অভিভাবক ও স্থানীয় জনতা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায়। পীরগাছার বে-সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নিয়োগ বানিজ্য, অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্ণীতিতে ধেয়ে গেছে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নেতারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ায় অতি গোপনে উপজেলায় কাংখিত যোগ্যতা ছাড়াই চাহিদামত অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক ও সুপারসহ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গুলিতে শিক্ষক কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছা মত আগমন-প্রস্থান করেন। পীরগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল হাকিম সরদার, প্রধান শিক্ষক ছোট ভাই আব্দুল হামিদ সরদার, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী মকছুূদুন্নাহার শরীর চর্চা শিক্ষক হতে সহকারী প্রধান শিক্ষক। সভাপতি হাকিম সরদারের দুই মেয়ে সহকারী শিক্ষক ও ল্যাবসহকারী এবং চাচাত বোন সহকারী শিক্ষক।
ল্যাব সহকারী ও চাচাত বোন দীর্ঘ দিন হতে নিজেদের ইচ্ছা মত আগমন-প্রস্থান করেন। কখনো সপ্তাহে ১ দিন কখনো মাসে ১/২ স্কুলে এসে হাজিরা খাতা স্বাক্ষর করেন। দীর্ঘ ১৫ বছরে তাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি স্থানীয়রা। কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, বিধি বহির্ভূতভাবে যৌতিক প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই বিদ্যালয়ের ৫টি জীবিত গাছ কেটে আত্মসাৎ করেছেন। সভাপতি নিজের ভাই ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ইচ্ছামত সেশন ফি, ভর্তি ফি ও প্রশংসা পত্রের জন্য টাকা আদায় করেন। দীর্ঘ দিনেও টিউশন ফির টাকা শিক্ষকদের দেওয়া হয়না। পীরগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাধিক তৃতীয় বিভাগ নিয়ে প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক চাকুরী করছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ সরদার বলেন, বিধি মোতাবেক নিয়োগ নিয়েছি। শিক্ষক-কর্মচারী অনুপস্থিত থেকে বেতন নেওয়ার বিষয়ে বলেন, স্টাফ কাউন্সিলের অভ্যান্তরীন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাই সুবিধা নিয়েছেন। শুধু আমার ভাতিজি একাই না। আমার ভাতিজি সপ্তাহে ২/১ দিন আসত এবং স্বাক্ষর করে চলে যেত।
অপরদিকে নেকমামুদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল কুদ্দুছ ভূঁইয়া অখ্যাত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অতি গোপনে নিয়োগ বিধি লংঘন করে একাধিক তৃতীয় বিভাগ ধারী মাহফুজুল ইসলাম মঞ্জুকে মিয়াকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ওই বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ৩ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করেই সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে উপজেলার কল্যাণী উচ্চ বিদ্যালয়, , বড়দরগা উচ্চ বিদ্যালয়, সৈয়দপুর কারামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, নটাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়,কাশিয়া বাড়ী, ইটাকুমারি বালিকা, ইটাকুমারি হাইস্কুল, দামুর চাকলা উচ্চ বিহারি উচ্চ বিদ্যালয় ও দেউতি স্কুল এন্ড কলেজ, স্বচাষ তালতলা দাখিল মাদ্রাসা, দেওয়ান সালেহ আহমেদ দাখিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করছেন স্থানীয় ছাত্র জনতা।
কাশিয়া বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ও পাওটানা হাট বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মহসিন আলী তাদের বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম ধামা-চাপা দেওয়ার জন্য ছাওলা ইউনিয়নের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করিয়েছেন। পাওটানা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মহসিন আলী মিছিল করানোর বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামানো ঠিক হয়নি। আনোয়ারুল মাস্টার বলেন, আমরা শিক্ষার্থী দিয়ে মিছিল করিয়েছি। এ জন্য সাংবাদিকদের উচিৎ আমাদের বাহাবা দিয়ে নিউজ করা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন বলেন, অনেকগুলি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।